নদী দূষণ ও আমাদের করণীয়
নদী পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক বাংলাদেশ। ছোটবড় সাত শতাধিক নদ-নদী বাংলাদেশের বুক জুড়ে প্রবাহিত। এসব নদ-নদী আছে বলেই বাংলাদেশ শস্য শ্যামলে ভরে ওঠে। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের পেছনে নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর জলে বয়ে আসে পলি। তাই বাংলার মাটি অতি উর্বর। অথচ এই নদীগুলোকে এক শ্রেণির মানুষ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে। প্রতি নিয়ত চলছে নদী দখল ও দূষণের মতো অপকর্ম।
‘এশিয়ান ওয়াটার ডেভলপমেন্ট আউটলুক -২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ৪৮টি দেশের মধ্যে নদীর পানি সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
একসময় বাংলাদেশের প্রায় সকল নদীর জল স্বচ্ছ ছিল। তাই নদীর জীববৈচিত্র্য ছিল নিরাপদ। নদী দূষণ এর কারণে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। নদীতে অবাধে ফেলা হচ্ছে দূষিত বর্জ্য। নদী দূষণের কারণে পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্যতা।
‘নদী মাতৃক বাংলাদেশ’ আজ ‘নদী বিপর্যয়ের দেশে’-এ পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলো আজ অস্তিত্ব সংকটে। ক্রমাগত নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। অনেক ছোট ছোট নদী বিলুপ্ত হবার পথে।
নদীর সঙ্গে আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির রয়েছে জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক। অথচ আমাদের দেশের নদীগুলো এখন বর্ষাকাল শেষে মরাখালে পরিণত হয়। থেমে যায় জীবন ও জীবিকার গতি প্রবাহ। শুস্ক মৌসুমে ছোট নদী গুলোর দিকে তাকালে মনে হয় এযেন ফসলের মাঠ।
নদীতে পলি জমে ছোট-বড় প্রায় সব নদী গুলোই নাব্যতা সংকটে ভুগছে। চর, ডুবোচরের কারণে দেশের নৌপথ গুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। যার কারণে রাস্তায় যানজটের করুণ অবস্থা। নদীপথ গুলো সচল থাকলে হয়তো যানজটের করুণ অবস্থা থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যেত। নৌপথ অনেক সাশ্রয়ী। মাল-পত্র নৌপথে আনা-নেওয়া করলে ব্যবসায়-বাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে। তাই নদী গুলো দখলমুক্ত করে খনন কাজ চালালে নদীপথ সচল হয়ে উঠবে।
নদীর সঙ্গে এদেশের মানুষের রয়েছে সুগভীর সম্পর্ক। নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে আমরা হাঁপিয়ে উঠি। ফিরে যাই নদীর কাছে। শ্রান্তির নিঃশ্বাস ফেলি। নদী প্রশান্তির মায়াজালে আমাদের ঘিরে রাখে। নদী আশ্রিত পাখিদের কলরবে আমরা মুগ্ধ হই। পালতোলা নৌকা আর মাঝিদের ভাটিয়ালি গান মনকে উদাস করে তোলে। নদীকে ঘিরে রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস। নদী আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধু। সেই নদীকে আমরা হীনস্বার্থে দখল-দূষণ করে চলেছি।
বাংলাদেশের ছোটবড় সকল নদ-নদী খনন ও দখল-দূষণ মুক্ত করা অতিব জরূরী।নদী পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। নদীকে রক্ষা করতে না পারলে পরিবেশের কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে।
নদী দূষণের কারণঃ
মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকান্ডই মূলত নদী দূষনের কারণ। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এক শ্রেণির মানুষ নির্বিচারে নদীতে ফেলছে দূষিত পদার্থ। মানবতা যেন দূরে কোথাও বন্দি।
- শিল্প-কারখানার বর্জ্য, গৃহস্থালীর বর্জ্য, অবাধে ফেলা হচ্ছে নদীতে।
- কৃষি জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক এসে মিশে যাচ্ছে নদীতে।
- নিকাশি ব্যবস্থার মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে নদী ও অন্যান্য জলাশয়।
- গবাদী পশু নদীতে স্নান মৃত পশুপাখি নদীতে ফেলার কারণে নদী দূষণ হচ্ছে।
- পরিত্যাক্ত আবর্জনা নদীতে ছুড়ে ফেলার কারণে ঘটছে নদী দূষণ।
- নদী তীরের অস্বাস্থ্যকর পায়খানা হতে মলমূত্র নদীতে গিয়ে মিশছে।
- ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে নদী দূষণ হচ্ছে।
নদী দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
বিজ্ঞানীদের মতে, নদীর দূষিত পানিতে যেসব মাছ বা প্রাণি থাকে এবং জলজ উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। সেসব মাছ, প্রাণি বা জলজ উদ্ভিদেও দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে সেসব দূষিত পদার্থ মানব দেহে চলে আসে। যার কারণে মানুষ ক্যান্সার সহ নানাবিধ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। নদী দূষণের কারণে মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
This blog for good subject about us to improve our environment. Thanks.
Thanks for your good comment.
Good post! We will be linking to this particularly great post on our site. Keep up the great writing